যদি আপনার কোন অফিসের সহকর্মী আপনাকে না জানিয়েই আপনার ওয়ালেট থেকে ১০০ টাকা সরিয়ে ফেলেন, আপনি কি রেগে যাবেন? জি আপনি অবশ্যই রেগে যাবেন।
আবার যদি আপনার আপনার সহকর্মী এসে আপনাকে আপনার সপ্তাহের ছুটির দিনটা কেমন কেটেছে তা জিজ্ঞেস করে তাহলে কি আপনি রেগে যাবেন? না, বরং আপনি তার সাথে নিজের সাপ্তাহিক ছুটির দিন নিয়ে গল্প শুরু করবেন।
মজার বিষয় হল প্রথম ঘটনায় আপনার সহকর্মী ১০০ টাকা নিয়েছিল, কিন্তু ২য় ঘটনায় সে আপনার কাছে থেকে নিয়েছে সময়।
যদিও আপনি আপনার অর্থ আবার উপার্জন করতে পারবেন, বা টাকা ফেরতও পাবেন। কিন্তু আপনার মূল্যবান সময় আপনি কখনই আর ফেরত পাবেন না।
বাস্তবতাটাও এরকমই। আমরা আমাদের প্রিয় ডিভাইসগুলোর বা টাকার যতটা মূল্যায়ন করি, সময়ের ব্যাপারে ঠিক ততটাই উদাসীন।
এর কারণ হল, আমাদের অনেকেরই ধারণা আমাদের সবথেকে মূল্যবান জিনিষ হল আমাদের বস্তগত সম্পদ। আদতে বিষয়টি এমন নয় মোটেই। আমাদের জীবনের সবথেকে মূল্যবান হল আমাদের সময়।
আপনার কাছে যদি অর্থসম্পদ উপভোগ করার মতন সময়ই না থাকে, তবে আপনি যে পরিমাণ অর্থসম্পদের মালিকই হন না কেন তা কোনই কাজে আসবে না।
আপনার জীবনের সময় ফুরিয়ে গেলে এই অর্থ বৈভবের কিছুই আপনি সাথে নিয়ে যেতে পারবেন না।
তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো, এমন ৫ টি উপায়, যা অনুসরন করে আপনারা নিজেদের মূল্যবান সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে পারেন।
১) লক্ষ্য ঠিক করুন
লক্ষ্য ছাড়া কেউই কোন কাজ ঠিকমতন করতে পারে না। আপনি যদি আপনার লক্ষ্য নির্দিষ্ট না করেন, তাহলে আপনি প্রচুর কাজ করলেও বুঝতে পারবেন না ঠিক কতটুকু কাজ সমাধা করেছেন, আর আরো কতটুকুন কাজই বা আপনার করা প্রয়োজন।
এক্ষেত্রে ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করে কাজে আগালেই তা দ্রুত অর্জন করে কাজে এগিয়ে যাওয়া যায়। এমন কোন লক্ষ্য তৈরি করবেন না যা অর্জন করা আপনার জন্য খুবই কষ্টসাধ্য।
এক্ষেত্রে যদি কোন বড় কাজকে আপনি আপনার লক্ষ্য হিসেবে ঠিক করে থাকেন, সেক্ষেত্রে চেষ্টা করুন সেটাকে ভেঙে ছোট ছোট কয়েকটি লক্ষ্যে ভাগ করে নিতে যেন তা সহজে অর্জন করা যায়।
২) শিডিউল তৈরি করুন
আপনার লক্ষ্য নির্ধারনের পরের কাজটিই হবে সেই লক্ষ্য অনুযায়ী কাজে এগিয়ে যাবার জন্য একটা শিডিউল তৈরি করে নেয়া। এতে আপনার কাজে গতি আসবে। গুছিয়ে কাজ করবার জন্য শিডিউলের কোনই বিকল্প নেই।
আপনার কাজকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিয়ে তা শিডিউল অনুযায়ী ঠিক করে নিন।
শিডিউল তৈরি করে তা অনুযায়ী চলার জন্য আপনি ২ ভাবে আপনার শিডিউল তৈরি করতে পারেন।
ক) আপনি খাতা-কলমের সাহায্যে নিজের শিডিউল তৈরি করতে পারেন। দিনের কোন কোন সময়ে ঠিক কতটুকুন কোন কাজ করতে চান তা একটা কাগজে লিখে ফেলুন চট করে।
সাধারণত প্রতি সপ্তাহের শিডিউল সপ্তাহের শুরুতেই করে ফেলবেন।
খ) স্মার্টফোনের যেকোন একটি এপ ব্যবহার করে আপনি শিডিউল তৈরি করতে পারেন। গুগোল ক্যালেন্ডার এক্ষেত্রে সবচাইতে জনপ্রিয়।
৩) সময়সীমা
সময়সীমা বা ডেডলাইন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি যদি নিজের কাজের জন্য কোন সময়সীমা নির্ধারনই না করেন সেক্ষেত্রে আপনি স্বভাবতই কাজ ধীরগতিতে করতে থাকবেন, কাজে অলসতা চলে আসবে।
প্রতিটি ছোট ছোট কাজেই আপনার দরকার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা। যেই সময়সীমার পূর্বেই আপনার কাজটি শেষ করতে হবে।
The 7 Habits of Highly Effective People PDF Download
৪) শাস্তি আর পুরস্কারের ব্যবস্থা করুন
কোন কাজ সময়সীমার ভেতর শেষ করতে পারলে নিজের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করুন। আর যদি তা শেষ না করতে পারেন তবে তার জন্যও নিজের জন্য করুন শাস্তির ব্যবস্থা।
কি ধরনের পুরস্কার আর শাস্তি?
তা আপনি ব্যক্তিগতভাবে ঠিক করবেন।
আপনি পুরষ্কার হিসেবে চিন্তা করতে পারেন, নিজের পছন্দের কোন খাবার বা পছন্দের যায়গায় ঘুরতে যাওয়া।
আবার শাস্তি হিসেবে ঠিক করতে পারেন, টিভিতে আপনার পছন্দের কোন নাটক দেখা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা।
এতে আপনার কাজে নতুন উদ্যম খুঁজে পাবেন।
৫) কাজের বিরতি নিন
বেশ কিছুক্ষন টানা কাজ করার কিছু সময়ের জন্য বিরতি নিন। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের মনোযোগ সর্বোচ্চ টানা ২৫-৩৫ মিনিট একটি কাজে নিবদ্ধ থাকে। তাই, প্রতি ৩০ মিনিট একাগ্র চিত্তে কাজ করবার পর ৫-১০ মিনিটের ছোট বিরতি নেয়া উচি।
এতে কাজের গতি কয়েকগুন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
৬) একসাথে একটি মাত্র কাজ করুন
কখনই একসাথে একাধিক কাজ হাতে নিবেন না, একটি কাজ শুরু করুন, শেষ করুন- এরপর আরেকটি কাজ শুরু করবেন। তার আগে নয়।
অনেক সময়ই আমরা মাল্টিটাস্কিং বা একই সাথে একাধিক কাজ করার ব্যাপারে শুনে থাকি সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু বস্তত, এতে খুবই কম কাজ সমাধা হয় নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে।
আপনার ব্রেইন যখন একটি কাজে একাগ্রভাবে পূর্ন মনোযোগ এ নিবদ্ধ থাকবে, তখনই তার সর্বোচ্চ কার্যক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।
তাই একই সাথে একাধিক কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। একটি একটি করে কাজ সমাধা করুন।
৭) কাজের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন
আপনার কাজের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত পরিবেশ। যদি কাজের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ না থাকে, তা আপনার ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করবে, আপনার কাজে বিঘ্ন ঘটাবে।
তাই, কাজ শুরু করার পূর্বেই আশেপাশের সবকিছু পরিস্কার করে পরিচ্ছন্ন একটা পরিবেশ তৈরি করবেন। এতে আপনার কাজে চলে আসবে নতুন উদ্যম।
আমাদের কারো হাতেই অফুরান সময় নেই। অর্থহীন কাজে আমাদের এই সংক্ষিপ্ত আর মূল্যবান সময় নষ্ট না করে প্রয়োজনীয় কাজে ব্যয় করা উচিৎ। কোন গঠনমূলক কাজ না করে একটি দিন অতিবাহিত করা আর প্রতিদিন আপনার ব্যাংক একাউন্ট থেকে প্রতিদিন হাজার টাকা পানিতে ফেলে দেয়া একই কথা।
সুতরাং, আপনার নিয়ন্ত্রণ নেই এমন বিষয়গুলি নিয়ে অর্থহীন আলোচনা পরিহার করুন- নিজের আর সমাজের জন্য উপকারী আর গঠনমূলক কাজে সময় ব্যয় করুন। আমাদের সময় কতটা সীমিত তা সম্পর্কে সচেতন হোন।
দ্যা ৭ হ্যাবিট অফ হাইলি ইফেক্টিভ পিওপল বাংলা পিডিএফ ডাউনলোড
আমাদের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে শেয়ার করুন। ভবিষ্যতে এমন আরো পোস্ট পড়তে, সাবস্ক্রাইব করুন। আর আমাদের আর্টিকেল নিয়ে কোন মন্তব্য থাকলে তা কমেন্ট বক্সে লিখে জানান।
ভবিষ্যতে অন্য কোন কোন টপিকের ওপর আর্টিকেল পড়তে চান, তাও আমাদের জানান কমেন্ট বক্সে।