বেকারত্ব ঘোচাতে অনেকেই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে বহুদিন যাবৎ। পড়াশোনা শেষ , রেজাল্টও মাশাল্লাহ ভালো। অথচ চাকরি নামক সোনার হরিণের দর্শন মেলেনি এখনো। আর সেই সোনার হরিণ কি খুঁজে পেতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে, তবুও কোন হাদিস নেই। ব্যাপারটি পীড়াদায়ক, আর এই পীড়ার কবলে পড়তে হয় অনেক চাকরী-সন্ধানী মানুষদের। চাকরি পাওয়ার ফর্মুলা চেঞ্জ হয়েছে, দেশ উন্নত হচ্ছে। সাথে সাথে সিস্টেমেরও পরিবর্তন এসেছে, ক্লাসের ফার্স্ট বয়, কিংবা ফার্স্ট গার্ল হলেই যে ভালো চাকরিটা সবার আগে পাবেন, এমন ধারণাগত হয়েছে ঢের আগেই।
একটা সময় ছিল যখন অভিভাবক বলতেন অংক আর ইংরেজীটা ভালো করে শেখো, নইলে ভালো চাকরি পাবে না। ওই দিন এখন আর নেই, এমনকি ইংরেজি ও কম্পিউটার জ্ঞানের উপর ভরসা করেও আর এগোনো যাচ্ছে না। নয়া জমানার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাকরির বাজারে হাল আমলে যোগ হয়েছে, নতুন নতুন চাহিদা। তার সঙ্গে মিল রেখে নতুন সব যোগ্যতাই নিজেকে সাজাতে হচ্ছে, নবীন চাকরিপ্রার্থীদের।
আর তাইতো , আজ আমরা কথা বলবো চাকরি পাওয়ার ১০টি সেরা উপায় বা কৌশল নিয়ে, আশা করছি কৌশলগুলো রপ্ত করতে পারলে, আপনি যে কোন জায়গাতে আপনার জন্য স্থান করে নিতে পারবেন।
১। নতুন তরিকা ও নেটওয়ার্কিং:
ধরুন কোন একটি পদে হুট করে গুটিকয়েক কর্মী দরকার হয়ে পড়ল। অল্প কয়েকটি পদের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রার্থীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া টা, অনেক সময় চাকরিদাতাদের কাছে হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়। আশেপাশের পরিচিত জনদের মধ্যে যোগ্য কেউ থাকলেও তো ল্যাঠা চুকে যায়। কি দরকার এত মহাযজ্ঞের? বিশ্বাস করুন কোম্পানির মালিক হলে আপনি এমনটা ভাববেন, এতে দোষের কিছু নেই। তো পরিচিতদের মধ্যে পাওয়া না গেলে ডাক পড়ে আশেপাশের সহকর্মী ও অধীনস্থদের, তাদের বলা হয় আপনারাই খুঁজে বের করুন না।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর বেশি আর গড়াই না চাকরির পানি, গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান ছাড়া বেশিরভাগ চাকরি বিজ্ঞপ্তি মুখ দেখে না। তাই বলে ওই বেশিরভাগ চাকরি কি আপনার নাগালের বাহিরে থাকবে? যদি তা না চান তবে আপনাকে কৌশলেই স্থান করে নিতে হবে। সেই দ্বিতীয় স্তরটি তে, যেখানে আপনার চেনা গণ্ডির মধ্যে থাকবেন দেশের সেরা চাকরিদাতা কিংবা কোম্পানীর সিনিয়র এক্সিকিউটিভরা। আধুনিক কেতাবি ভাষায় যাকে বলা হয় নেটওয়ার্কিং। আর তাই চাকরির বাজারে ভালো অবস্থান ধরে রাখতে অবশ্যই আপনাকে গড়ে তুলতে হবে ,একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্কিং।
২। সিভির দিকে মনোযোগ দিন:
সেভিতে অবশ্যই ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। সুন্দরভাবে তুলে ধরা অবজেক্টিভ অবশ্যই নিয়োগকারীদের প্রভাবিত করে, সর্বোচ্চ দুই তিন লাইনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী নিজের শক্তিশালী দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। অবশ্যই তা যেন নিয়োগকারীদের বিরক্তির উদ্রেক না করে, সিভি যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত করা ভালো। পরীক্ষার ফল , সিজিপিএ ব্যাংকিং ৩ এর নিচে হলে না লেখাই ভাল। তবে সে ক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতা কে প্রাধান্য দিতে হবে।
এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের বিস্তারিত বিবরণ না দিলেও সমস্যা নেই। বৈবাহিক অবস্থা ,জাতীয়তা, ধর্ম , ওজন , উচ্চতা, এসব তথ্য খুব জরুরী নয়। রেফারেন্স হিসেবে ফেশারদের অবশ্যই তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষকেই নির্বাচন করা উচিত। আরেকজন হতে পারে যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছেন সেখানকার সুপরিচিত কেউ। রক্তের সম্পর্কের কাউকে এখানে উল্লেখ না করাই উচিত। তবে রেফারেন্স যাদের দেওয়া হবে, তাদের জানিয়ে রাখতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় তাদের কাছে সিভির একটি কপি থাকলে।
৩। এক্সট্রা কারিকুলার:
এখনকার কর্পোরেট অফিস গুলোতে এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজ এর উপর খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়। সিভিতে যত বেশি সহশিক্ষা কার্যক্রম এর কথা উল্লেখ করতে পারবেন, চাকরির ইন্টারভিউতে ডাক পর সম্ভাবনা ততই বেশি হবে।
৪। স্বেচ্ছাসেবক:
নেটওয়ার্ক বাড়ানোর জন্য একটি সরল পদক্ষেপ হচ্ছে সামাজিক উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার। এর সুবাদে অনেক গুণী লোকের সঙ্গে পরিচয় হতে পারে, এমন অনেকেই তখন আপনাকে চিনবেন যারা কিনা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে কর্মরত। ফলে যখন তাদের কর্মী দরকার হবে তখন তারাই হয়তো আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
৫। আপডেটেড থাকুন:
সময়টা এগিয়ে থাকার শত মানুষের মধ্যেও চাকরিদাতার চোখ যেন আপনার উপরেই পড়ে। যদি তিনি আপনার মধ্যে বিশেষ গুণ এর সন্ধান পান, তবে চাকরিটা আপনার ঝুলিতেই পড়বে। এ জন্য দরকার চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আগে থেকেই কিছু জেনে রাখা। একাজে ঢের উপকারে লাগে প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটে, ওই সব ওয়েবসাইটে নিয়মিত ঘুমালেই যথেষ্ট।
পছন্দের প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা তৈরি করে রাখুন তাদের চাকরির বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে খোঁজখবর রাখুন, চাকরির ধরন বুঝে তৈরি করুন আবেদন পত্র।
৬। রেফারেন্স তৈরি:
বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলো গুগলে ইন্টার্শিপ করেছেন, বাংলাদেশের রাগিব হাসান। তিনি জানান গুগোলে শতকরা ৬০ ভাগ কর্মী রেফারেন্স এর মাধ্যমে নেয়। এমনি এমনি রেফারেন্স তৈরি হয়ে যাবে এমনটি ভাবা অযৌক্তিক। এজন্য নিজেকেই উদ্যোগী হতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ যার সঙ্গেই পরিচয় হবে , তার ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করুন। নানা উৎসব আয়োজনে তাদের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাতে পারেন। তাদের দুঃখের খবর জানলে সমবেদনা জানান। সম্ভব হলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন, রেফারেন্স বাড়ানোর সহজ তরিকা।
৭। জব মার্কেট সম্পর্কে জ্ঞান:
প্রত্যাশিত চাকরি পেতে হলে চাকরির বাজার সম্পর্কে অবশ্যই ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। কখন কোন কাজের চাহিদা বেশি সেটা আঁচ করতে হবে, সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে।
৮। চাকরির মেলায় যান:
প্রতিবছরই নানা পরিসরে জব ফেয়ার হয়। যেখানে চাকরি ডালি নিয়ে হাজির হয় চাকরিদাতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। জব ফায়ারে যাওয়ার আগে সুন্দর গোছানো সিভি নিয়ে যেতে ভুলবেন না। মেলায় প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন করে, চাকরির হাল-হকিকত জানতে ওই সেমিনারে অংশ নিতেই হবে।
৯। প্লিজ আমাকে ডাকুন:
প্রয়োজনটা যেহেতু আপনার তাই আগবাড়িয়ে আপনাকে বলতে হবে (প্লিজ আমাকে ডাকুন) এক্ষেত্রে বিভিন্ন কোম্পানির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়ার আগেই সেখানে সিভি জমা দিতে পারেন। আপনার যোগ্যতা ও চাহিদামত পদের কথা উল্লেখ ও করতে পারেন আবেদনপত্রে। যোগ্যতা একাধিক পদের হলে ভিন্ন ভিন্ন পদের কথা উল্লেখ করতে পারেন।
১০। জীবনের ধন:
কিছুই যাবে না ফেল, অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। পরে নিতান্তই শখের বশে রিট কলেজ থেকে ক্যালিগ্রাফির উপর একটি কোর্স করেন। এ ক্যালিগ্রফি যে কাজে আসতে পারে তা ভাবেননি। এর ১০ বছর পরে স্টিভ জবস যখন ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের ডিজাইন করেছিলেন, তখন কাজে লাগে তার ক্যালিগ্রাফি বিদ্যা। এখন কম্পিউটারের ফন্ট জবসের ক্যালিগ্রাফি বিদ্যার ফসল।
পরবর্তী সময়ে উইন্ডোজ ম্যাক এর ফ্রন্ট ব্যবহার করে , তাই বলা হয় জবস যদি ক্যালিগ্রাফি না শিখতেন তাহলে হয়তো কম্পিউটারে এত সুন্দর ফ্রন্ট থাকতো না। স্টিভ জবসের মতোই জীবনের সব জ্ঞান আপনার জন্য এক একটি বিন্দুর মত কাজ করবে। সুতরাং যতটা সম্ভব নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরে তুলুন। সেসব জুড়ে দিয়ে পেয়ে যাবেন জীবনের সরল সহজ সমাধান।
শেষ কথা:-
তো পাঠক: এই ছিল মোটামুটি আমাদের আজকের চাকরি পাওয়ার কিছু কৌশল বিষয়ক তথ্য। যদি এর বাহিরেও কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন। কমেন্ট বক্স তো খোলাই থাকছে আপনাদের জন্য। আর যদি আপনার কাছে আজকের পোস্টটি কাজের মনে হয়, তাহলে আপনার বন্ধু বান্ধবের কাছে পোস্টটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন।
আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি, আপনি যদি চাকরি বিষয়ে পোস্ট প্রতিনিয়ত পড়তে পছন্দ করেন তাহলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন ধন্যবাদ।